আজ তোমাদের সাথে শেয়ার করবো অ্যাপারচার কি ও কিভাবে কাজ করে।
অ্যাপারচার হল ফটোগ্রাফি এর সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ পরিমাপক।
একটা ছবি তোলার জন্য অ্যাপারচার অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অ্যাপারচার মূলত লেন্সের হোল।
সহজভাবে অ্যাপারচার বলতে একটা দরজাকে বুঝায় যার মাধ্যমে বাইরের আলো ক্যামেরাতে এবং সেন্সর এ প্রবেশ করে।
আরও সহজভাবে বুঝার জন্য আমরা আমাদের চোখকে বিবেচনা করতে পারি।
সব ক্যামেরা ই সাধারণত মানুষের চোখের মত করে ডিজাইন করা।
লেন্স এর সামনের এলিমেন্টটি আমাদের চোখের কর্নিয়া এর মত কাজ করে যেটা সাধারণত আলোগুলোকে একত্রিত করে এবং আইরিশ এর দিকে প্রবেশ করায়।
আইরিশ পিউপিল এর সাইজকে কন্ট্রোল করতে পারে যার মাধ্যামে সে নিজে সংকুচিত এবং প্রসারিত হতে পারে।
আমরা সাধারণত ফটোগ্রাফিতে অ্যাপারচার যেটাকে বলি সেটিই হচ্ছে পিউপিল।
যে পরিমাণ আলো রেটিনাতে প্রতিফলিত হয় সেটি সাধারণত পিউপিল দারাই নির্ধারিত হয়।
পিউপিল যত বড় হবে তত বেশি পরিমাণ আলো রেটিনাতে প্রতিফলিত হবে।
তেমনিভাবে অ্যাপারচার এর পরিমাণ ও যত বড় হবে তত বেশি পরিমাণ আলো ক্যামেরাতে প্রবেশ করবে।
লেন্স এ আইরিশ অ্যাপারচার এর পরিমাণ নির্ধারণ করে যেটিকে ডায়াফ্রাম বলা হয়।
ডায়াফ্রাম ফাংশনটি অ্যাপারচার এর ভেতর দিয়ে যে আলোগুলা যায় সে আলোগুলো ব্যতীত অন্য সব আলোকে ব্লক করে দেয়।
ফটোগ্রাফিতে অ্যাপারচারকে সাধারণত f number দিয়ে প্রকাশ করা হয় যেটি সাধারণত f stops নামেও পরিচিত।
আমরা সাধারনত একটি অ্যাপারচার খোলা এবং বন্ধ হওয়া সম্পর্কে যেটা বুঝি সেইটা হল f stop যত ছোট হবে অ্যাপারচার এর পরিমাণ তত বড় হবে আর f stop যত বড় হবে অ্যাপারচার এর পরিমাণ তত ছোট হবে।
এখানে একটি ট্রীক আছে যেহেতু বড় f stop মানে হল ছোট অ্যাপারচার তো আমরা বলতে পারি f stop of F/1.4 F/2.8 থেকে বড় এবং F/8 or F/11 থেকে আরও অনেক বড়।
ক্যামেরা অথবা লেন্স এর ভেতর দিয়ে আলো পাসিং এর পরিমাণ কন্ট্রোল করা ছাড়াও ডেপ্থ অফ ফিল্ড এর উপরও অ্যাপাচার এর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব রয়েছে।
একটি ছবির কতটুকু শার্প হবে সেটিই ডেপ্থ অফ ফিল্ড নির্ধারণ করে।
একটি বড় f number যেমন f/16 একটি ছবির ফোরগ্রাউণ্ড এবং ব্যাকগ্রাউণ্ড সব কিছু কেই ফোকাস করবে
আবার একটি ছোট f number যেমন f/1.4 ফোরগ্রাউণ্ড অথবা ব্যাকগ্রাউণ্ড যে কোন একটিকে আইসোলেট করবে এবং তা ব্যতীত সবকিছুকে ব্লার করে দিবে।
প্রত্যেকটা লেন্স এর ই একটা লিমিট আছে যে তার অ্যাপারচার কত বড় বা ছোট হতে পারবে।
আমরা আমাদের লেন্সগুলার specification ঘাটলেই দেখতে পারব এটার ম্যাক্সিমাম অ্যাপারচার অর্থাৎ সবচেয়ে ছোট f number এবং মিনিমাম অ্যাপারচার অর্থাৎ সবচেয়ে বড় f number কত তা ইণ্ডিকেট করে দেওয়া আছে।
একটি লেন্স এর ম্যাক্সিমাম অ্যাপারচার মিনিমাম অ্যাপারচার এর থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
কারণ এটি লেন্স এর স্পিডকে প্রকাশ করে।
F/1.4 অথবা F/2.8 অ্যাপারচার এর লেন্সগুলাকে সাধারণত ফাস্ট লেন্স বলা হয় কারণ তারা অনেক বেশি পরিমাণ আলো ক্যামেরাতে প্রবেশ করাতে পারে f/4 অথবা f/5.6 এর লেন্স গুলার তুলনায়।
একটি লেন্স এর মিনিমাম অ্যাপারচার আসলে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ না এবং এটা খুব বেশি ব্যবহার করাও ঠিক না কারণ ডিফ্রাকশন ছবির ক্লারিটি নষ্ট করে ফেলে।
আরও একটি জিনিস জানা দরকার সেটি হল দুই ধরনের লেন্স আছে। একটি হল প্রাইম লেন্স এবং অপরটি হল জুম লেন্স।
প্রাইম লেন্স গুলা সাধারণত ফিক্সড ফোকাল লেন্থ এর হয় অর্থাৎ এটি দিয়ে আপনি জুম ইন অথবা আউট করতে পারবেন না। আপনাকে ফিজিক্যালি মুভ করে জুম ইন অথবা আউট করতে হবে।
জুম লেন্সগুলা আপনাকে জুম ইন এবং আউট করার ফ্লেক্সিবিলিটি দেয়।
প্রাইম লেন্স এর সাধারণত বড় ফিক্সড অ্যাপারচার থাকে। কিন্তু জুম লেন্স এর খেত্রে অ্যাপারচার সাধারণত কমে যায় ফোকাল লেন্থ বাড়ার সাথে সাথে। যার কারণে এই লেন্সগুলাকে ভেরিয়েবল অ্যাপারচার লেন্স ও বলা হয়।
এটা আমাদের জেনে রাখা দরকার যখন একটি ৭০–২০০ ফোকাল লেন্থ এর জুম লেন্স এ যখন অ্যাপারচার ৩.৫ থেকে বেড়ে ৫.৬ এ যায় তখন সাধারণত ক্যামেরা এর ভেতরে আলো প্রবেশের পরিমাণ কমে যায় কারণ আমরা জানি অ্যাপারচার ক্যামেরা এর ভেতরে আলো প্রবেশের পরিমাণ নির্ধারণ করে।
একটি বড় অ্যাপারচার অর্থাৎ ছোট f number ক্যামেরা এর ভেতরে অনেক বেশি আলো প্রবেশ করায় যার কারণে আমরা অনেক ফাস্ট শাটার স্পিড এবং লো আই এস ও তে ছবি তুলতে পারি।
যখন শাটার স্পিড একটি নির্দিষ্ট ভেলুতে সেট করা থাকে। ফাস্ট লেন্স গুলা নাইট টাইম ফটোগ্রাফিতেও অনেক সহায়তা করে যেমন মিল্কি ওয়ে অথবা মুনলিট ফটোশুট এর সময় তখন এর বড় অ্যাপারচার অনেক বেশি আলো ক্যামেরাতে প্রবেশ এ সহায়তা করে।
ল্যাণ্ডস্কেপ ছবি তোলার সময় আামাদের ছোট অ্যাপারচার এর লেন্স অনেক সহায়তা করে কারণ ল্যাণ্ডস্কেপ ছবিতে আমাদের সমস্ত সিনএই সুন্দর ফোকাস এর প্রয়োজন পড়ে। ছোট অ্যাপারচার এর লেন্সগুলা সমস্ত সিনকেই খুব সুন্দর করে ফোকাস করতে পারে।
এখন আসা যাক অ্যাপারচারকে আমরা ম্যানুয়ালি কিভাবে কন্ট্রোল করব।
দুটি উপায় আছে।
একটি হল অ্যাপারচার প্রায়োরিটি মুড।যেখানে আমরা আমাদের প্রয়োজন মত অ্যাপারচার চেন্জ করতে পারব এবং ক্যামেরা সেই অনুযায়ী শাটার স্পিড এবং আইএসও সেট করবে যাতে করে ছবিটি প্রপারলি এক্সপোজড হয়।
আর একটি হল ম্যনুয়াল মোড যেখানে আপনি অ্যাপারচার ছাড়াও ক্যামেরা এর সবকিছু কন্ট্রোল করতে পারবেন।
বেশিরভাগ ফটোগ্রাফি এর জন্যই এই ইনফরমেশন গুলো দিয়ে আমরা বিভিন্ন লেন্স এবং ক্যামেরা ব্যবহার করা শিখতে পারব তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী।
সবশেষে বলা যায় অ্যাপারচার হচ্ছে ফটোগ্রাফি এী অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ যেটি ছবিকে বিভিন্ন সুন্দর সুন্দর ইফেক্ট দিতে সক্ষম।
সকলকে ধন্যবাদ, দেখা হবে আগামী Tutorial এ।